নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নিতাইগঞ্জের ডালপট্টি এলাকায় মা-মেয়ের খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ঘটনার পর ধারালো ছুরিসহ আটক আল জোবায়ের স্বপ্নীলকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (২ মার্চ) দুপুরে হত্যাকাণ্ডের শিকার রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রামপ্রসাদ চক্রবর্তী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বিকেলে জোবায়েরের বিরুদ্ধে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠালে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূর মোহসীনের শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জোবায়ের স্বীকার করেছেন অবসাদগ্রস্ত জীবনে টাকা ও স্বর্ণের জন্যই তিনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুরে ডালপট্টিতে ছয়তলার ফ্ল্যাটে ঢুকে মা রুমা চক্রবর্তী ও ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে খুন করেন জোবায়ের।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রামপ্রসাদ ‘মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্সে’ চাকরি করেন। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় বাড়ির মালিকের ভাগ্নে জানান তাদের ফ্ল্যাট যে ভবনে, সেটির নিচে অনেক লোক জড়ো হয়েছে। তিনি গিয়ে দেখেন, ভবনের ফটক বাইরে থেকে তালা দিয়ে রেখেছে। ভেতর থেকে তার ছেলে হৃদয়ের স্ত্রী শিলা কান্নাকাটি করছে। শিলা জানান তাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে এক যুবক রুমা ও ঋতুকে ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়েছে। শিলাকে হত্যার জন্য রান্নাঘরে বটি হাতে নেন হামলাকারী। তবে শিলা কৌশলে সেই বটি ছিনিয়ে নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে নিচে নামেন। হামলাকারী যুবক তাকে ধাওয়া করে নিচে নামেন, তবে ততক্ষণে ভবনের অন্য লোকজন এসব টের পেয়ে বাইরে থেকে ফটক আটকে দেয়। ওই যুবক ফের ৬ তলার ফ্ল্যাটটিতে ফিরে যান। শিলার থেকে শুনে তিনি স্ত্রী রুমার মোবাইল ফোনে কল করলে তা রিসিভ করেন ওই যুবক। টাকা-গয়না কোথায় আছে জানতে চান। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। ততক্ষণে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। পুলিশসহ তিনি ফ্ল্যাটে গিয়ে ওই যুবককে আটক করে। উদ্ধার করে মরদেহ।
জোবায়ের শহরের পাইকপাড়াপুল এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে। আলাউদ্দিন মিয়া জানান, তার ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়। তবে আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় পড়ালেখা চালাতে পারেনি। এক দেড় মাস ধরে তার ছেলে অস্বাভাবিক আচরণ করছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু বলেন, “জোবায়েরকে আমরা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে স্বীকার করেছে তার নিজের চলার জন্য টাকার দরকার। এ কারণে বড় বাড়িটি তিনি টার্গেট করেন। ছয়তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে কলবেল বাজিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই ফ্ল্যাটের কেউ দরজা খোলেননি। তখন পাশের রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর ফ্ল্যাটে কলবেল চাপেন তিনি। ওই ফ্ল্যাটের দরজা খুললে ভেতরে ঢুকে রুমা চক্রবর্তীর গলা চেপে ধরেন জোবায়ের। এ সময় রুমার গলার মালা তিনি ছিনিয়ে নেন। এরপর ছুরি মেরে রুমাকে হত্যা করেন। রুমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তী এগিয়ে এলে তাঁকেও ছুরি মেরে হত্যা করে।”